প্রশ্ন
রাসূল (সা.) এর মিরাজ সম্পর্কে কেউ কেউ বলে যে, তা স্বপ্নে ছিল। স্বশরীরে ছিল না। এ ব্যাপারে কোন কথাটি সঠিক?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
রাসূল (সা.) এর মিরাজ স্বশরীরেই ছিল। কুরআন মাজিদ, হাদিস শরিফ ও ইজমায় উম্মাত থেকে এমনটিই বুঝে আসে। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন-
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آَيَاتِنَا إِنَّه هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
‘পবিত্র ঐ মহান সত্তা, যিনি রাত্রি বেলায় তাঁর বান্দাকে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন, যার আশপাশকে আমি বরকতময় করেছি। এটা এজন্য যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাতে পারি।’ [সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ১]
হাদিস শরিফে এসেছে-
‘একদা রাতে রাসূল (সা.) হযরত উম্মে হানী (রা.) এর ঘরে শুয়েছিলেন। রাসূলের অর্ধনিদ্রা অবস্থায় হযরত জিবরীল (আ.) অন্যান্য ফেরেশতাসহ অবতরণ করেন এবং হুযুর (সা.) কে মসজিদে হারামে নিয়ে যান। রাসূল (সা.) তখন হাতীমে কা’বায় ঘুমিয়ে পড়েন। হযরত জিবরীল ও মীকাঈল (আ.) নবী (সা.) কে জাগিয়ে যমযমের পাশে নিয়ে সীনা মুবারক বিদীর্ণ করে অন্তরাত্মা বের করে যমযমের পানিতে ধুয়ে ইলম ও হিকমতে পরিপূর্ণ করে স্বর্ণের তশতরীতে রাখেন। অতঃপর পুনরায় বক্ষে স্থাপন করে দেন। এরপর বোরাক নামক বাহনে করে হুযুর (সা.) কে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে যান। অতঃপর সেখান থেকে আসমানে নিয়ে যান। প্রথম আসমানের নিকট গিয়ে জিবরীল (আ.) দরজা খোলার আবেদন জানান। ফেরেশতাগণ অভিবাদন জানিয়ে রাসূল (সা.) কে বরণ করে নেন। এভাবে সপ্তম আসমান অতিক্রম করেন। এসময়ে যথাক্রমে প্রথম আসমানে হযরত আদম (আ.), দ্বিতীয় আসমানে ইয়াহইয়া এবং ঈসা (আ.) তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ (আ.) চতুর্থ আসমানে হযরত ইদরীস (আ.) পঞ্চম আসমানে হযরত হারুন (আ.) ষষ্ঠ আসমানে হযরত মূসা (আ.) সপ্তম আসমানে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। সকলেই হুযুর (সা.)কে অভ্যর্থনা জানান। সপ্তমাকাশ থেকে রাসূল (সা.) রফরফ নামক বাহনের মাধ্যমে সিদরাতুলমুনতাহা ও আরশে আযীমে গমন করেন। সেখানে অনেক আশ্চর্য ও বিস্ময়কর জিনিস প্রত্যক্ষ করেন। জান্নাত জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখেন। পরিশেষে আল্লাহর দীদার ও কালাম লাভে ধন্য হন। এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে উপঢৌকন স্বরূপ পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাযের বিধান নিয়ে জমিনের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন। পথিমধ্যে হযরত মূসা (আ.) এর পরামর্শক্রমে কয়েকবার আল্লাহর নিকট গিয়ে নামাযের সংখ্যা কমানোর আবেদন জানান। অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত নামায (যাতে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সওয়াব পাওয়া যাবে।) এর বিধান নিয়ে বাইতুল মুকাদ্দাস হয়ে মক্কায় ফিরে আসেন।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৮৮৭]
ফাতহুলবারী ৭/২৫০,২৫৯
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/9799/article-details.html